কলিকাতা হাইকোর্ট, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১০, সকাল ৮ টা, সাধারনত এই সময়ে কেউই সেরকম এসে উপস্থিত হয়না, ব্যাতিক্রম অবশ্যই মোনালিসা। মোনালিসা অরুনাংশু চৌধুরীর সেক্রেটারি, ভাগ্যক্রমে বা দুর্ভাগ্যবশত সেটা অবশ্য বলা যায়না। মোনালিসাকে সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে এসে জাস্টিস চৌধুরীর অফিসের তালা খুলে ঘরটা সাফসুতরো করতে হয়, তারপর চা গরম একটু, আর জাস্টিস চৌধুরীর দিনের রুটিনটায় চোখবুলিয়ে নেওয়া, এগুলোর জন্য সময় তার আধাঘণ্টা, ঠিক আটটায় জাস্টিস চৌধুরী অফিসে ঢোকেন, তারপরতো সময় যেন রাজধানীর গতিতে ছোটে।
আজ একটু যেন সবকিছু অন্যরকম, সময়টা বনগাঁ লোকালের থেকেও ধীরে চলছে। আটটা পাঁচ বাজে, চৌধুরী মহাশয় তো লাপাত্তা, মোনালিসা ওনার সাথে পাঁচবছর কাজ করছে, লেট হতে দেখেনি কোনদিন, কিছু খবর পেলেও হয়, যদি দেরী হয় আরো ১০-১৫ মিনিট, একটা সিগারেট ফুঁকে আসা যায়। মোনালিসা ফোন লাগাল জাস্টিস চৌধুরীর বাড়ী, ফোন বেজে বেজে থেমে গেল, কোন উত্তর নেই।
সকাল ৮ টা ৪৫, মোনালিসা চারপাচ বার ট্রাই করেছে চৌধুরীর সাথে কন্টাক্ট করার, করতে পারেনি, কি করাযায় সেটাই যখন ভাবছে সেই সময় অফিসের ফোনটা বেজে উঠল।
– হ্যাঁ মোনা, আমি ব্যারিস্টাস শাসমল কথা বলছি, বলছি স্যার কখন আসছেন, আজতো হিয়ারিং ছিল সাড়ে আটটায়, উনিতো সাধারন্ত দেরী করেন না।
– উনি আসেননি এখন স্যার।
– আসেননি, বল কি? এ আবার হয়নাকি? স্যার তো সবার আগে আসেন, আর আজ হিয়ারিং, উনি ছুটি নেবার লোক তো নন।
– সেটাই তো বুঝতে পারছিনা স্যার, কি যে করি, ফোনও করেছিলাম বাড়ীতে, কেউতো তুলছে না।
– হুম্ম, কি করা যায় বলত? তুমি এক কাজ করনা কেন, কাউকে ওনার বাড়ী পাঠাও, দেখ কি ব্যাপার, এরম তো হয়না, আমি বরঞ্চ দেখি কিছুক্ষণ, সেরকম দেরী হলে নাহয় ডেট পিছিয়ে দেবার জন্য একটা অ্যাপিল করে দেবখন।
– ঠিক আছে স্যার, আমি দেখছি স্যার কতদুর কি করা যায়।
– দেখছি নয়, দেখছি নয়, do it immediately.
– ওকে, ফাইন স্যার, আমি পাঠাচ্ছি কাউকে।
– থ্যাঙ্কস।
ফোনটা কেটে গেল, ভদ্রলোক মনেহয় একটু রেগেই গেছেন, মোনালিসা ভাবল। এখন লোক কোথায় পায় সে, দায়িত্ব দিয়েতো শাসমল হাওয়া।
___
হাইকোর্টের সামনের জায়গাটা বেশ, একটা বটগাছ আছে, সেটাকে ঘিরে প্রচুর ছোট ছোট জটলা, এক একটা জটলায় এক একজন ছোটদরের উকিল তার লোক ঠকানোর ঝাঁপি খুলে বসেছে, সাথে একটা পুরনো টাইপরাইটার, আর প্রচুর ফাইল, বেশীরভাগই মূল্যহীন, এক একটা ট্র্যাপ, গ্রাম থেকে যে মানুষজন আসে তাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে কিছু কেস পাওয়া, এই আরকি। শ্যামল বলে একটা ছেলে আছে ওর মধ্যে, দালাল এদের, তাকেই ডাকল মোনালিসা।
– আসব দিদি?
– না, তুমি বাইরে দাঁড়াও, আমি আসছি।
শ্যামলের মত লোকেদের জাস্টিস চৌধুরীর অফিসে প্রবেশাধিকার নেই, সঙ্গত কারনেই। বাইরে এল মোনালিসা।
– আমার একটা কাজ করে দিতে হবে শ্যামল।
– বলুন দিদি।
– তোমায় একটু বাগবাজার যেতে হবে এখন, বাইক আছেতো?
– দিদি, এই ধান্দার টাইমে? বিকেলের দিকে গেলে হতনা?
– সেটা আমি পুষিয়ে দেব, তোমার ভাবনা না করলেও চলবে, আর তেলের দামও দিয়ে দেব।
– কিযে বলেন দিদি, আপনার কাছ থেকে তেলের দাম নেব? কাজটাকি শুনতে পারি?
– স্যার আসেননি আজ, ফোন করলা, ফোনও তুলছেন না, ভাবনায় আছি, আর আমি অফিস ছেড়ে যেতেও পারছি না, তোমায় একটু ওনার বাড়ী গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসতে হবে।
– সেকি, চৌধুরী মশাই আসেননি? সব ঠিকঠাক তো?
– সেটা যানার জন্যই তো তোমায় ডাকা, ঝাঁঝিয়ে উঠল মোনালিসা।
– তা অবশ্য…
– কত কি দিতে হবে সেটা বল।
– হে হে। সে আর কি বলব দিদি আপনাকে, টাকা লাগবে না, কিন্তু স্যারের সাথে একদিন কথা বলিয়ে দিতে হবে দিদি।
– আজকে যাচ্ছিস, বলে নিস, স্যার কি পলিটিসিয়ান না দেব যে কথা বলবি বলে লাফাচ্ছিস?
একটার সময় ফোন করল শ্যামল, বাড়ির সামনের দরজা খোলা, বাড়ীতে কেউ নেই।
– হ্যালো, শাসমল স্যার, মোনা বলছি, শ্যামলকে পাঠিয়েছিলাম, বাড়িতে কেউ নেই, দরজা নাকি খোলা।
– বলকি? আমি এখুনি লালবাজারে ফোন করছি, ওরা গিয়ে দেখুক।
– কিন্তু স্যার বাহাত্তর ঘন্টা…
– বাহাত্তর ঘন্টা, মাই ফুট, সেসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা, তুমি বরং বাড়ী যাও, টেনশন নিওনা, আমি দেখছি।
রাত আটটা, মোনা বাড়ীতে একাই আছে, ম্যাগী বানাচ্ছিল, অন্য কিছু ইচ্ছে করছেনা, কলিংবেলের আওয়াজ, দরজা খুলল মোনা। দুজন ভদ্রলোক, একজন পুলিশের ড্রেসে।
– নমস্কার মোনাদেবী, আমার নাম তিনকড়ি হালদার, আমি থানা থেকে আসছি।
You can follow me on Twitter, add me to your circle on Google+ or like our Facebook page to keep yourself updated on all the latest from Photography, Technology, Microsoft, Google, Apple and the web.